১১নং কাদাকাটি ইউনিয়নের উৎপাদিত শস্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শস্য হচ্ছে ধান। ধানের পরেই মাছের স্থান।
ভূমিকাঃ প্রতিনিয়তই আমাদের দেশের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার বাসস্থানের প্রয়োজনেই মূলতঃ কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও বাড়ছে মানুষের খাদ্যের চাহিদা। ফলে ব্যাপক জনগোষ্ঠির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের চাহিদা বর্তমান আবাদযোগ্য জমি থেকে প্রাপ্ত ফলন দ্বারা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রথমতঃ ক্রষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে এবং দ্বিতীয়তঃ সম্পদের সঠিক ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে না বিধায় কৃষকের আয় বাড়ছে না। ফলশ্রুতিতে কৃষি প্রধান আমাদের এই দেশের মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দূরাবস্থায় জীবন-যাপন করছে। এমতাবস্থায় কৃষি জমি ও সম্পদের সঠিক ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই সম্পদের সঠিক ও সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে লক্ষিত জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নের উদ্দেশ্যে মৎস্য চাষ সমপ্রসারণ প্রকল্পের অধীনে পরীক্ষামূলকভাবে করা হয়েছিল নীচু ধানক্ষেতের মিঠা পনিতে "সমন্বিত চিংড়ি চাষ কার্যক্রম"। কারণ ইতিমধ্যে এই খামার পদ্ধতিটি একটি খুবই লাভজনক ব্যবসায়িক কর্মকান্ড হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
সমন্বিত চিংড়ি চাষ অধিক আয়ের উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট ধানের জমিকে গলদা চিংড়ি চাষের উপযোগী করে প্রস্তুত করণের পর সেখানে মিঠা পানির চিংড়ি (গলদা), সাদা মাছ, ধান ও শাক-সব্জি একত্রে চাষাবাদ করাই হচ্ছে "সমন্বিত চিংড়ি চাষ"। অর্থাৎ একটি জমির চারপাশে উঁচু আইল তৈরী করে আইলের ভিতরের দিকে ক্যানেল বা ড্রেনের মতো কেটে পানিকে দীর্ঘদিন আটকে রাখার ব্যবস্থা করে (১-দিক, ২-দিক) সেখানে গলদা চিংড়ি সাদা মাছ (সিলভার কার্প, কাতলা, বিগহেড ইত্যাদি), জমির মাঝখানের সমতল জায়গায় ধান ও আইলে শাক-সব্জি একত্রে চাষ করাই হচ্ছে "সমন্বিত চিংড়ি চাষ"। উল্লেখিত ফসলের মধ্যে গলদা চিংড়িই বেশী মূল্যবান তাই এই চাষ ব্যবস্থাকে "সমন্বিত চিংড়ি চাষ" বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সমন্বিত চিংড়ি চাষের গুরুত্ব আমদের দেশের বিভিন্ন জমিতে চাষ করা হয়। যেমনঃ যদি কোন জমিতে ধান চাষ করা হয় তবে ষেখানে শাক-সব্জি চাষ করা হয় না বা জতিতে শাক-সব্জি চাষ করলে ধান চাষ করা হয় না আবার মাছ চাষের জন্য পুকুরকেই নির্বাচন করা হয়। আবার শখের বসে যদি কেই চিংড়ি চাষ করে তবে পুকুরই শেষ ভরসা। এভাবেই চলঠে আমাদের বর্তমান চাষাবাদ অবস্থা। ফলশ্রুতিতে জমির সঠিক ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে না এবং জমি থেকে প্রাপ্ত আয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছে না আমাদের চাষী ভাইয়েরা। এমতাবস্থায় সমন্বিত চাষের মাধ্যমে ছোট্ট এক টুকরা জমিকেও টাকার খনিতে রূপান্তরিত করা যায়। অর্থাৎ বিভিন্ন ফসল প্রথকভাবে চাষ না করে এক টুকরা ধানের জমিতে একই সাথে গলদা চিংড়ি, মাছ, ধান ও শাক-সব্জির চাষ করার মাধ্যমে একদিকে যেমন জমি থেকে প্রাপ্ত আয় বৃদ্ধি পায় অপরদিকে চাষাবাদের ঝুঁকি/ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়। নিম্নে একর প্রতি (১০০ শতাংশ) জমির বাৎসরিক আয়ের তুলনামূলক তথ্য প্রদান করা হলোঃ
ক্রমিক নং | ফসল | একক চাষ | সমন্বিত চাষ |
১. | ধান | ১০,০০০ | ১০,০০০ |
২. | চিংড়ি (মিঠা পানির) | - | ৬০,০০০ |
৩. | মাছ | - | ৮০০০ |
৪. | শাক-সব্জি | - | ২০০০ |
মোট | ১০,০০০ (সর্বোচ্চ) | ৮০,০০০(নুন্যতম) |
সমন্বিত গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতিসমন্বিত চিংড়ি চাষ পদ্ধতি হচ্ছে ধারাবাহিক কার্যক্রমের সমন্বয়। অর্থাৎ কাংখিত ফল পেতে হলে এই চাষাবাদ ব্যবস্থার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কিছু পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামান্য অবহেলা আপনাকে অনেক লাভ থেকে বঞ্চিত করতে পারে। বাংলাদেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্জলের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার চাষী ভাইয়েরা সমন্বিত চিংড়ি চাষ পদ্ধতির প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্ব ও যত্নের সহিত পালন করে এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের অতীত দুরাবস্থার থেকে অতি অল্প সময়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ভালো অবস্থায় আসতে পেরেছে। আর এতে এটি প্রমাণিত হয় যে, পরিশ্রম করলে অবশ্যই সফলতা আসে।
সমন্বিত চিংড়ি চাষ পদ্ধতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে সমস্ত পদক্ষেপগুলো নিতে হবে তা হলোঃ
১. জমি নির্বাচন ও অবকাঠামো তৈরী।
২. জমি প্রস্তুতকরণ / উপযোগীকরণ।
♥ মজুদ পূর্ব ব্যবস্থা
♥ মজুদকালীন ব্যবস্থা
♥ মজুদ পরবর্তরী ব্যবস্থা
৪. নার্সারী পুকুর থেকে জুভেনাইল (ছাটি) মূল জমিতে মজুদ, নিয়মিত খাদ্য প্রয়োগ ও যত্ন নেয়া।
৫. চিংড়ির সাথে অন্যান্য মাছের মিশ্রচাষ।
৬. আইলে শাক-সব্জি চাষ।
৭. নিয়মিত (মাসে দু'বার) চিংড়ির নমুনা পর্যবেক্ষণ।
৮. চিংড়ি আহোরণ ও বাজারজাতকরণ।
৯. চিংড়ি রোগ ব্যবস্থাপনা (সম্ভাব্য)।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS